শিকদার বাড়ির বউ

শিকদার বাড়ির বউ

লেখাঃ অনিক শিকদার

 

সাং সোহাগের সোহাগ করি

তারও পরে শিকদার বাড়ি।

কর্তা মশাই ব্যস্ত মানুষ

হুঁকা জ্বালায় ধুম্র ফানুস।

বন্দরে তাঁর ব্যবসা পাহাড়

নেইকো উনা স্বাস্থ্য বাহার।

বয়স তাঁর তিরিশ পাড়ায়

বিয়ের বয়স কিছু গড়ায়।

বহু খুঁজে পেলেন পাত্রী

পঞ্চ-শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রী।

 

জালসোয়া সাং কুমারী মেয়ে

স্বর্ণলতা যেন উঠছে বেয়ে।

বদন খানিতে মেঘনা উছলায়

খাঁ বাড়ি পুড়ে সেই জোছনায়।

না বুঝে সেই প্রেম-সংসার

না ভুলে সখি বৌছি খেলার।

সদ্য ফোটা পদ্ম-গোলাপ

মধুরস খানি ছিল নিষ্পাপ।

কাল-পরশু তার পুতুল বিয়ে

কে ভাবে সেই খেলনা নিয়ে।

 

বিয়েরডালা সাজাইয়া সবে

অপেক্ষিত, বউ আসবে কবে।

শিকদার বাড়ির বউ আসিল

সারা পাড়াগাঁ’র খিড়কি খুলিল।

প্রশংসিত সোনা-বরণ বউ

-‘মিয়া, প্রদীপ নিভিয়ে লও।’

 

সুখের কাঁটা হৃদয়ে খচিত

নাইয়র যায় সুদূরে ঘুচিত।

বধূহীন আজ কাটে ছ’মাস

ব্যথিত বুকে কত যে হুতাস।

-‘অবুঝ কি জানে কেমন আছি?’

সে তো সারাদিন খেলে বৌছি।

 

একে দুয়ে করে দিন-মাস গড়ায়

একে অপরের মায়ায় জড়ায়।

এক প্রাণে ব্যথিত – অন্য প্রাণে টান

দুটি মনে মর্মরিত এক বিন্দু গান।

ঘর-সংসার সবই তো হল

শূণ্য ঘর জুড়ে পূর্ণতা এল।

 

একদা শিকদার হাটতে গেল

সাপের লেজে পাড়া দিল!

সাপের ধাওয়ায় হয়েছে ক্লান্ত

জোছনা বিবি না পায় অন্ত।

স্বামীরে বাঁচাবে সেই প্রতিজ্ঞা

সাপেরে মারিল রাত জাগিয়া।

 

সুখেদুঃখে সব যাচ্ছিল ভাল

স্নান করতে বিবি ঘাটে আসিল।

সাপের ধ্বংসনে হারাল চেতন

মিয়ার মাথায় ভাঙ্গিল ভুবন।

ঝাড়ফুঁক কত করিল ওঝা

খোদার কৃপা যায় কি বুঝা?

 

নতুন আশার সূর্য ওঠে

এক বাগানে শতফুল ফুটে।

বিবি শিখে গেছে সংসারধর্ম

জানিয়াছে কত-সহস্র কর্ম।

হটাৎ কোন কলি কালে

এ প্রাণ যৌবন হারালে।

 

কে যাওয়ার ছিল, কে গেল?

সব এলোমেলো, কূল হারাল।

দুটি পাখির জুড়া টুটিল

কাননবাসিনী বৃদ্ধা হয়ল।

আজ স্মৃতিকথা তার হৃদয় ভেজায়

নাতিপুতি ডাকিয়ে অতীত বিলায়।

 

 

 

১৮ই ভাদ্র ১৪২৪

সোহাগপুর।

0.00 avg. rating (0% score) - 0 votes