স্বার্থপর সন্তান

বহুদিন হয়ে গেলো
মায়ের পড়নে ফিরোজা রঙের শাড়িটি দেখিনা
বাবা কিনে দিয়েছিলেন
বেশ দামী ছিলো বটে
মা স্বযত্নে আলমারির তাকে সেটি রাখতেন
মায়ার পরশ দিয়ে গায়ে দিতেন
খুব কম ধোয়ার চেষ্টা করতেন
যদি রঙ বদলে যায়
.
বাবা যখন দূরে থাকতেন
মা মাঝে মাঝে শাড়ি খানা বের করে হাতের পরশ দিতেন/
আমরা ভাই-বোনেরা বড় বড় চোখ করে তাকাতাম/
কতো সুন্দর রঙিন জামদানী শাড়ি/
জামদানী ছিলো আভিজাত্য শ্রেণির কাপড়/
বড়সড় অনুষ্ঠান না হলে সেটি পড়তেন না/
তখন মায়ের সংসার সুখের সমুদ্রে ভাসছিলো/
তাই মা তখন সম্পূর্ণ নিরাময় ছিলেন/
ওষুধের বড়ি ছিলো তাঁর পেটে বদহজম/
মনের সুখে গুনগুনিয়ে গান গাইতেন/
.
হঠাৎ একদিন সুখের সাগরে দুঃখ নেমে আসে/
সংসারের ঘানি টানতে টানতে মা /
এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন/
শাড়িটি ফ্যাকাশে ফিরোজা বর্ণ ধারণ করে/
পড়তে পড়তে সেটি ছিঁড়ে পণ্ড হয়ে যায়/
পরিবারের কর্তা হয়ে হিসাব কষতে কষতে/
স্বামীর দেওয়া জামদানী শাড়ি/
মায়ের শরীরের জামদানি শাড়ি/
একদিন বেমালুম উধাও হয়ে গেলো/
.
সন্তানদের মনের বাসনা মেটাতে গিয়ে/
কতো হিমশিমে পড়তে হয়/
শাড়ি হারালেন/
হারালেন বিয়ের গয়নাগাটি /
আরো হারালেন জীবনের সুখ/
আমরা সন্তানেরা এখন বেশ বড় হয়েছি/
গায়ে-গতরে বেড়ে উঠেছি/
মালকড়িও মোটামুটি কামাচ্ছি/
কিন্তু সেই ফিরোজা রঙের শাড়িটি /
নতুন রঙে বুনতে পারিনি/
মায়ের সেই শাড়ির আঁচলে চোখ মুছবার /
জন্য ভাই-বোনদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো/
অথচ এখন সেই আঁচল কেউ খুঁজি না।/
.
মায়ের শরীরে বাসা বেঁধেছে হাজারো রোগ/
আমরা পারছিনা ফেরাতে সুখ/
মায়ের নির্বাক বিশ্রব্ধ দু’টি চোখ /
অপলক চেয়ে থাকে আমাদের ফিরোজা রঙের কাপড়ের দিকে/
আমাদের শরীরে নতুন নতুন/ শাড়ি-কামিজ-ব্লাউজ-শার্ট/
অথচ সেই ফিরোজা শাড়ি কোথায়?/
মাঝে মাঝে মাও অনুভব করে /
বেজন্মা সন্তানের জন্মদানের যন্ত্রণা কতটুকু/
সেটা সবাই কি বুঝে?/
আমাদের বিবেক বড়ই অবুঝ শিশু /
মায়ের চেনা চোখ দু’টি আজ বড়ই অচেনা/
কারণ নিয়তির এই কঠিন অনিবার্য;/
সত্যের কাছে মা আত্মসমর্পণ করেছে/
তারপরও আমি এখনো মনে মনে ফিরোজা শাড়ি পরা /
আমার চিরচেনা সেই মাকেই খুঁজে বেড়ায়/
তাঁর শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে /
লুকোচুরি খেলার পায়তারা করি।

0.00 avg. rating (0% score) - 0 votes