জানবে ওটা আমি
-বলরাম সরকার
——————————
গ্রীষ্মের ভরদুপুরে যখন –
বসে বটগাছের শীতল ছায়ায়
ক্লান্ত পথিক তার শরীর জুড়ায় ;
পাকা আমের গন্ধে, বিভোরে
ভন ভন করে মাছিরা ওড়ে :
তখন যদি দেখ –
জলের অভাবে চরের জমিটা
হয়ে গেছে চৌচির ফুটিফাটা
জানবে ওটা আমি –
তোমার করুনার অভাবে
হয়ে যাচ্ছি মরুভূমি।
বর্ষার আকাশ যখন –
কালো মেঘে থাকে ছেয়ে,
মেটায় মাটির তৃষা অঝোর ধারা দিয়ে;
সকলে রাস্তায় নামে
রথের দড়ি দু হাতে টানে :
তখন যদি দেখ –
বন্যার জলে ভেসে যেতে যেতে,
কেউ যদি খড় কুটো ধরে চায় বাঁচতে :
জানবে ওটা আমি –
যে আজীবন বাঁচতে চায়
আঁকড়ে ধরে শুধু তোমায়।
শরতের নীল আকাশে
মেঘের পানসি নৌকো ভাসে;
হাওয়াতে চরের কাশফুল দোলে,
পুকুর ভরে যায় গোলাপি কমলে ;
শিশুরা মাতে পুজোর ছুটিতে ;
সকলেই উতসবে ওঠে মেতে –
তখন যদি দেখ –
দুড়দাড় ভাঙ্গছে নদীর পাড়
জানবে ওটা আমি –
ভেঙ্গে চলেছি সকালে বিকালে
তোমার হৃদয় তলে মিশব বলে।
হেমন্তে যখন –
জল ভরা পুকুরে মরাল মরালী ভাসে ;
ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু মুক্তার মত হাসে;
হাল্কা কুয়াশা দেয় শীতের পূর্বাভাস;
ঘরে ঘরে নবান্নের ছড়ায় সুবাস;
তখন যদি দেখ –
কিছু ঘাস সাদা হয়ে গেছে,
চাপা পড়ে কাঠের গুঁড়ির নিচে,
জানবে ওটা আমি –
ইচ্ছে তারও অনেক আছে :
ডগায় শিশির কণা জমিয়ে –
দেবে তোমার পা দুটি ভিজিয়ে ।
শীতের সকালে যখন –
গ্রামে মানুষ গুলো বসে
আগুনের চারিপাশে ;
দিন ছোট হয়, রাত বাড়ে
ভোরের আকাশ মুখ ঢাকে
কুয়াশার চাদরে ।
তখন যদি দেখ –
রাস্তায় কোনো ভবঘুরে হেটে যায় খালি গায়ে;
জানবে ওটা আমি-
পাগল হয়ে গেছি,
তোমার ভালোবাসার উষ্ণতা না পেয়ে।
বছর শেষে বসন্তে যখন –
জাগে লালের শিহরণ
কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের বনে ;
ব্যাকুলতা জাগে সকলের মনে
কোকিলের কুহু ডাকে ;
ফাগুনের চাঁদ দেখে,
শিরা আর ধমনীতে আগুন জ্বলে ওঠে ;
তখন যদি দেখ –
পাতা ঝরা গাছের ডালে উঠেছে ফুটে
নতুন একটি কুঁড়ি ;
জানবে ওটা আমি
তোমার অবহেলার ঝড় গুলো সব সয়ে
প্রেমকে আজও আমি রেখেছি বাঁচিয়ে।
************************************