অজয় নদীর কাব্য
পঞ্চম পর্ব।
প্রথম প্রকাশ- 25শে জানুয়ারী, 2018
দ্বিতীয় প্রকাশ- 25শে ফেব্রুয়ারী, 2018
তৃতীয় প্রকাশ- 25শে মার্চ, 2018
চতুর্থ প্রকাশ-17ই মে, 2018
পঞ্চম প্রকাশ- 2রা জুন, 2018
——ঃ ****¬ঃ———–
অজয় নদীর গতির ধারা (5)
– মূলচাঁদ মাহাত
(1)
অজয় নদীর গতির ধারা
চঞ্চল অবিরল,
বালুচরের আঁকে বাঁকে
উচ্ছল কল্ কল্।
(2)
গাঁয়ের বধুরা কাপড় কাচে
স্নান সেরে যায় ঘরে,
কচিকাঁচা দল সাঁতার কাটে
হৈ হুল্লোড় করে।
(3)
জেলে মাঝি কূল মৎস ধরে
জীবিকা দিন যাপন,
যাত্রী পারাপার করে চলে
নৌকারই সোপান।
(4)
জলচর প্রাণী মনের হরষে
জল কেলি করে খায়,
রাখাল বালক অজয় তীরে
মন হরা গান গায়।
(5)
জল সিঞ্চনে ফসল ফলায়ে
কৃষক আত্মহারা,
দু কুলের কুল ভরিয়া চলে
ধনধান্যে বসুন্ধরা।
——ঃ ****¬ঃ———–
ভূমিকা (অবতরণিকা)
মনের গহনে প্রাণের স্পন্দনে আবার জেগে উঠলো অজয়ের কলতান। অজয় বীরভূম আর বর্ধমানের স্পষ্ট সীমানা। সারা বছরই যেন এই বিশাল নদীটি মুখ থুবডে, পডে. আছে। জল থাকেই না বলতে গেলে, চারদিকে শুধু বালি, এক জায়গায় শুধু তিরতির করে বয়ে যাচছে, সেটাই তার বেঁচে থাকার লক্ষণ। লোকজন হেটেই পার হয়, গরুর গাড়িও চলে।
বরষার সময় দুয়েকটা মাস দেখা যায় তার আসল রূপ। এমনি ভাবেই চলে অজয়ের প্রবল জলধারা। বর্ধমানের ভাঙন অপরদিকে বীরভূমের মাটির গড়ন। এই ভয়াবহ রূপের মধ্যে অজয় সবার একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়ালেও বর্ষার শেষে অজয়ের রূপে সবাই মোহিত হয়।
অজয় নদী হল একটি বন্যাসঙ্কুল নদী যা গঙ্গার অন্যতম প্রধান শাখা ভাগীরথী হুগলির উপনদী। মুঙ্গের জেলায় একটি ৩০০ মিটার উচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহী অজয় ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনের নিকট শিমজুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে।
বর্ধমান ও বীরভূম জেলার প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমানের কাটোয়া সাবডিভিসনের কেতুগ্রাম থানা অঞ্চলে বর্ধমানে প্রবেশ করে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথীর সংগে মিলিত হয়েছে।অজয় মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮ কিলোমিটার যার মধ্যে শেষ ১৫২ কিমি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। অজয়ের প্রধান উপনদীগুলি হল ঝাড়খণ্ডের পাথরো ও জয়ন্তী এবং বর্ধমানের তুমুনি ও কুনুর।
অজয়ের ধারা শুরু থেকে অনেকদুর অবধি ল্যাটেরাইট মাটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমানের আশুগ্রামে এসে শেষ পর্যন্ত পাললিক অববাহিকায় প্রবেশ করে। অজয়ের উপত্যকায় ঘন জঙ্গল ছিল। কিন্তু অধুনা খনিজ নিষ্কাষণ ও অন্যান্য মনুষ্যজনিত উপদ্রবে বেশিরভাগ জঙ্গল বিনষ্ট হয়ে গেছে।
সকলের একনিষ্ঠ সহযোগিতা আর শুভ আশীর্বাদ মাথায় রেখে প্রকাশ করলাম অজয়নদীর কাব্য পঞ্চম পর্ব। কবিতা সকলের ভালো লাগলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। সকলকে জানাই রাঃ নন্দিত জয়গুরু।
বিনীত কবি।
তারিখ 2রা জুন, 2018
স্থান নতুন দিল্লি।
——ঃ ****¬ঃ———–
সূচীপত্র
1. অজয় নদীর ঘাট
2. অজয়ের নদীজল
3. অকূল গাঙের মাঝি
4. অজয়ের কোলাহলে
5. অজয় নদী বয়ে চলে
6. গাঁয়ের অজয় নদী
7. অজয় নদীর ঘাটের কাছে
——ঃ ****¬ঃ———–
অজয় নদীর ঘাট
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
গাঁয়ের অজয় নদী চলে আনমনে,
শঙ্খচিল ভেসে চলে সুনীল গগনে।
গাছেগাছে পাখি ডাকে হরষিত মন,
নদী ধারে ওই পারে আছে আমবন।
গাঁয়ের বধূরা সবে নদী ঘাট হতে,
কলসীতে জল নিয়ে চলে রাঙাপথে।
দুইধারে ধানখেতে ধান কাটে চাষী,
রাখালিয়া সুরে শুনি দূরে বাজে বাঁশি।
মনাস উদাস হয় শুনি সেই গান,
অজয়ের জলধারা করে কলতান।
বন শালিকের দল চরে করে খেলা,
অজয়ের নদীতটে আসে পড়ে বেলা।
দূর গাঁয়ে জ্বলে দীপ হেথা অন্ধকার,
সাঁঝের আঁধার নামে ঘাটে চারিধার।
——ঃ ****¬ঃ———–
অজয়ের নদীজল
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শীতল তরুর ছায়ে আমাদের গ্রাম,
তরুশাখে পাখি ডাকে হরষিত প্রাণ।
প্রভাতে অরুণ রবি উদিল গগনে,
ফুলকলি ফোটে সব কুসুম কাননে।
রাখাল গরুর পাল নিয়ে যায় মাঠে,
দুইধারে ধানখেতে চাষী ধান কাটে।
বোঝা বোঝা ধান লয়ে চলে গরুগাড়ি,
রাঙা পথে দুই ধারে খেজুরের সারি।
তাল সুপারির গাছ আমের বাগান,
দূরে অজয় নদীর শুনি কলতান।
শঙ্খচিল ভেসে চলে আকাশের গায়,
অজয়ের নদী জলে মাঝি ডিঙা বায়।
ঘাটে ঘাটে করে স্নান গাঁয়ের বধূরা,
বন ধূতুরার ফুলে ছেয়েছে কিনারা।
অবিরত বয়ে চলে অজয়ের ধারা,
অজয়ের কলতানে জাগে বসুন্ধরা।
——ঃ ****¬ঃ———–
অকূল গাঙের মাঝি
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অকূল গাঙের মাঝি রে…………….
ও মাঝি রে …….. ও মাঝি ভাই ……….
মাঝি রে তুই সাধ করে
বালুচরে বাঁধলি কেন ঘর?
জীবন নদীর ঝড় তুফানে
আসছে রে ঝঞ্ঝা ভয়ংকর।
আশে পাশে নাইরে কেহ
ধরবে কে তোর হাত?
দুঃখে দুঃখে যাবে কেটে
তোর আঁধার ভরা রাত।
অকূল গাঙের মাঝি রে
তোর ছিঁড়ে গেছে পাল
ভেঙে গেছে হাল
কেমনে তরী চলবে?
নদী মাঝ থেকে
এসে কিনারায়
তরীখানি বুঝি ডুববে।
অকূল গাঙের মাঝিরে তুই
মিছেই করিস আশা।
জীবন নদীর ঘূর্ণিপাকে
তোর কাঁদছে ভালবাসা।
মনমাঝি কাঁদে নদীর কূলে
তরীখানি তার দিশা ভূলে,
আপনমনে চলছে সাগর পানে।
একবার এগিয়ে যায়
আবার পিছনে যায়
চলছে তরীখানা জোয়ার ভাঁটার টানে
অকূল গাঙের মাঝি রে
অকূল গাঙের মাঝি রে…………….
ও মাঝি রে …….. ও মাঝি ভাই ……….
——ঃ ****¬ঃ———–
অজয়ের কোলাহলে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয়ের কোলাহলে মেতে ওঠে গ্রাম,
নদীজল ছল ছল বহে অবিরাম।
দুইপারে ছোট গ্রাম মাঝে নদী বয়,
নদীতীরে সুশীতল সমীরণ বয়।
নদীজল কল কল করে কোলাহল,
অজয় নদীর ধারা বহে অবিরল।
মাঝি ভাই নৌকা বায় ভাটিয়ালি সুরে,
শাল পিয়ালের বনে বাঁশি বাজে দূরে।
অজয়ের হাঁটুজল বৈশাখের মাসে,
নদীবাঁকে ঝাঁকেঝাঁকে শালিকেরা আসে।
পার হয় গরুগাড়ি, পার হয় লোক,
নদীপারে দৃশ্য হেরি ভরে দুই চোখ।
অজয়ের নদীচরে পড়ে আসে বেলা,
রবি ডুবে সাঙ্গ হয় দিবসের খেলা।
——ঃ ****¬ঃ———–
অজয় নদী বয়ে চলে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয় নদী বয়ে চলে আমার গাঁয়ের পাশে,
প্রভাতবেলায় পূব গগনে অরুণ রবি হাসে।
নদীর ঘাটে যাত্রীরা এলে গাঁয়ের মাঝিভাই,
গান গেয়ে মাঝি বৈঠা হাতে নৌকা চালায়।
নদীর চরে খেলা করে বন শালিকের ঝাঁক,
দূর আকাশে ভেসে আসে শঙ্খচিলের ডাক।
নদীরঘাটে পাড়ার ছেলে আসে গামছা পরে,
তেল মেখে চান করে তারা ফিরে যায় ঘরে।
বেলা পড়ে আসে নদীর ঘাটে সূর্য অস্ত যায়,
সাঁঝের আঁধার আসে নেমে নদীর কিনারায়।
জোনাকিরা জ্বলে গাছে নদীর ঘাটের কাছে,
নির্জন নদীর ঘাটে দেখি নৌকা বাঁধা আছে।
দূরে নদীর ঘাটে ঘাটে চাঁদের আলোক ঝরে,
জোছনারাতে জোনাকিরা কাঁদে অজয়ের চরে।
——ঃ ****¬ঃ———–
গাঁয়ের অজয় নদী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
গাঁয়ের অজয় নদী চলে আঁকে বাঁকে,
হিমেল হাওয়া বয় গাছে পাখি ডাকে।
দুই ধারে উঁচু নীচু অজয়ের পাড়।
মাঝিভাই খেয়া বায় টেনে চলে দাঁড়,
খেয়া পারাপার করে সারাদিন ধরে,
মাছরাঙা মাছ খায় বসে বালুচরে।
নদী ধারে ধান মাঠে আসে বনটিয়া,
শিস দেয় বারে বারে হরষিত হিয়া।
মাঠেমাঠে পাকে ধান চাষী যায় মাঠে,
গান গেয়ে সারাদিন মাঠে ধান কাটে।
এপারেতে তালবন খেজুরের সারি,
ওপারে সবুজ গাছ ছোট ছোট বাড়ি।
গাঁয়ের বধূরা সব নদী ঘাট হতে,
কলসীতে জল নিয়ে চলে রাঙাপথে।
অজয়ের নদীঘাটে পড়ে আসে বেলা,
নামে সন্ধ্যা শেষ হয় দিবসের খেলা।
——ঃ ****¬ঃ———–
অজয়নদীর ঘাটের কাছে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয় নদীর ঐ ঘাটের কাছে,
মা কালীর এক মন্দির আছে।
দূরে দেখি নদীর শ্মশান ঘাটে,
জ্বলে ওঠে চিতা দিনে রাতে।
যাত্রী বোঝাই নৌকা আসে,
পূবের গগনে অরুণ হাসে।
যাত্রীরা নামে নৌকা হতে,
পায়ে হেঁটে চলে রাঙাপথে।
গাঁয়ের বধূরা কলসী কাঁখে,
জল নিয়ে আসে নদী থেকে।
নদীর বাঁকে মোড়ের মাথায়,
ভালুক-ওয়ালা ভালুক নাচায়।
গাঁয়ের বাউলরা নদীর চরে,
একতারা বাজিয়ে গান করে।
শাল পিয়ালের বনে বাঁদাড়ে
মুরগী ডাকে ঝোপের আড়ে।
পড়ে আসে বেলা সূর্য ডোবে,
নামে আঁধার বাঁশের ঝোপে।
সানাই-এর সুর বেজে উঠে,
চাঁদের আলো জোছনা ফুটে।
——ঃ ****¬ঃ———–
অজয় নদীর কাব্য পাঠে পাঠক ও কবিগণের মন্তব্য।
আসরের স্বনামধন্য কবি
শহীদ খাঁন লিখেছেন-
সুপ্রিয় কবি বন্ধুবর। আপনার এ অসাধারন লেখণী
পুরাটা না পড়লে, কেউ সহজে অনুধাবন করতে
পারবেন না।আপনার লেখণীর মাঝে আমি অনেক
কিছুই খুজে পেলাম দাদা। শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা
সতত।
ভাল থাকবেন,
মনে রাখবেন।
——ঃ ****¬ঃ———–
আসরের স্বনামধন্য কবি
সঞ্জয় কর্মকার লিখেছেন-
মন ভরে গেল প্রিয় কবি। অপূর্ব সুন্দর উপস্থাপনা।
জলোরাশি ভালোবাসি অজয়ের ধারা,
কাশ বনে কূলে মাঝি
অতি মনোহরা।
রবি মামা দেয় হামা ঊষাভোরে নিত্য,
অজয়ের কলোরোলে-করে
মন নৃত্য।
রাতে শশী জ্বলে নেভে মেঘ তার আরপার,
তরঙ্গ জলোরাশি-ভালোবাসি
বার বার।
তারকার দেশে চলি উঁচুনিচু ঢেউ গুলি,
আর রবে ভাবাবেগে-গেয়ে চলি
কথাকলি।
অজয় সে জলোধারা তির তির চলে বয়ে,
মাঝি তার মল্লায়-বয়ে চলে
গান গেয়ে।
জেলে আর বরশিতে কচি কাঁচা মাছ ধরে,
জাল টেনে টোনাটুনি-মাছ নিয়ে
যায় ঘরে।
অজয় সে বুকে ধরি মাতামহী গরিমাতে,
জোড় করে ভক্তিতে-প্রণামেতে
প্রতি প্রাতে।
আন্তরিক প্রীতি ও শুভকামনা রইল প্রিয় কবি।
——ঃ ****¬ঃ———–
আসরের স্বনামধন্য কবি
রীনা বিশ্বাস (হাসি) লিখেছেন-
অজয় নদীকে ভুগলে পড়েছিলাম । আজ আপনার কাছ থেকে এতো জেনে অভিভূত হলাম প্রিয় কবিজি (দাদা) । প্রতিটি কবিতা আমার মনে দাগ কেটে গেল। কেন জানেন? আমি শিশুকালে মুর্শিদাবাদের বেনিয়াগ্রাম আর ফারাক্কায় থাকতাম। সেখানকার স্মৃতি আর দৃশ্যকে আজও ভুলতে পারনি। শেষবার গেছি ১৯৮৮ সালে। আর যাওয়া হয়নি। আপনি কবিতাতে যে বিবরণ দিয়ে থাকেন তা আমি যেন নিজ চোখে দেখি ।
অনেক অনেক ভালোলাগা মাখা ভালোবাসা দিলাম অজয় নদীকে আর
আমার প্রিয় কবি-দাদাকে।
জয় গুরু………
সবশেষে আমার মন্তব্য।
অজয় নদীর কাব্যের পাতায় আপনাদের মূল্যবান
সুমন্তব্য লিপিবদ্ধ করার জন্য আমার সহৃদয়
প্রিয় কবিগণকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
আগামী সংখ্যায় আরও অধিক মন্তব্য প্রকাশ করার আশা রাখি।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
সতত ও নিরন্তর।
সহৃদয় পাঠক ও কবিগণ সবাইকে
আমার রা স্বা নন্দিত
জয়গুরু!জয়গুরু! জয়গুরু!