অজয় নদীর কাব্য ( চতুর্থ পর্ব)
প্রথম প্রকাশ- 25শে জানুয়ারী, 2018
দ্বিতীয় প্রকাশ- 25শে ফেব্রুয়ারী, 2018
তৃতীয় প্রকাশ- 25শে মার্চ, 2018
চতুর্থ প্রকাশ-17ই মে, 2018
————————————————————
অবতরণিকা
অজয় নামটির অর্থ যাকে জয় করা যায় না। অজয় নদী একটি বন্যাসঙ্কুল নদী যা গঙ্গার অন্যতম প্রধান শাখা ভাগীরথী হুগলির উপনদী। মুঙ্গের জেলায় একটি ৩০০ মিটার উচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহী অজয় ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চিত্তরঞ্জনের নিকট শিমজুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং বর্ধমান ও বীরভূম জেলার প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমানের কাটোয়া সাবডিভিসনের কেতুগ্রাম থানা অঞ্চলে বর্ধমানে প্রবেশ করে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথীর সংগে মিলিত হয়েছে।
অজয় নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮ কিলোমিটার যার মধ্যে শেষ ১৫২ কিমি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। অজয়ের প্রধান উপনদীগুলি হল ঝাড়খণ্ডের পাথরো ও জয়ন্তী এবং বর্ধমানের তুমুনি ও কুনুর। অজয়ের ধারা শুরু থেকে অনেকদুর অবধি ল্যাটেরাইট মাটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমানের আশুগ্রামে এসে শেষ পর্যন্ত পাললিক অববাহিকায় প্রবেশ করে। অজয়ের উপত্যকায় ঘন জঙ্গল ছিল। কিন্তু অধুনা খনিজ নিষ্কাষণ কয়লা উত্তোলন ও অন্যান্য মনুষ্যজনিত উপদ্রবে বেশিরভাগ জঙ্গল সাফ হয়ে গেছে। কিন্তু আজও অবিচ্ছিন্ন গতিতে বয়ে চলেছে পূণ্যতোয়া অজয় নদীর ধারা।
সকলের অকু্ণ্ঠ সহযোগিতা আর সার্বিক সহায়তায় নতুন রূপে প্রকাশিত হলো অজয়নদীর কাব্য চতুর্থ পর্ব। আমার স্থির বিশ্বাস পূর্বাপূর্ব সংখ্যার মতো এই সংখ্যাটিও বাংলা কবিতা আসরের কবিগণের ও সহৃদয় পাঠকের হৃদয় জয় করে নেবে। বর্তমান সংখ্যাটির দেরীতে প্রকাশ করার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
শুভেচ্ছান্তে-
ইতি
বিনয়াবনত,
আপনাদেরই প্রিয়কবি।
——-ঃ ঃ———–
সূচীপত্র
1. নদীর ঘাটে হাট — লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
2. নদীর ঘাটে সূর্য ওঠে – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
3. নদী চলে এঁকে বেঁকে – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
4. অজয়ের ঘাটে – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
5. নদীর কিনারায় সরু বালির চর- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
নদীর ঘাটে হাট
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয় নদীর ঘাটে,
সকলেই আসে হাটে।
হাট বসে রবিবারে,
অজয় নদীর পারে।
কেউ আসে বোঝা মাথে,
আসে কেউ থলি হাতে।
বেগুন, পটল, আলু,
লাউ আনে চাষী কালু।
হাটে ঘি বেচে গোয়ালা,
ধূতি বেচে তাঁতি ভোলা।
এখো গুড়ে ভরা হাঁড়ি,
পথে চলে গরু গাড়ি।
চাল ডাল আটা চিনি,
হাটে চলে বিকিকিনি।
এসে হাটে জুটে সব,
করে খুব কলরব।
বেলা যেই আসে পড়ে
সবে যায় ফিরে ঘরে।
নির্জন নদীর ঘাট,
আঁধারেতে কাঁদে হাট।
——-ঃ ঃ———–
নদীর ঘাটে সূর্য উঠে
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয় নদীর ঘাটে পূবে সূর্য ওঠে,
নদী ধারে কাশবনে কাশফুল ফোটে।
নদীজলে কল কল কলরব হয়,
গাছে গাছে পাখি ডাকে সমীরণ বয়।
নদীবাঁকে আসে উড়ে বলাকার দল,
নদীজল কল কল করে কোলাহল।
খেয়াঘাটে মাঝিভাই চলে তরী বেয়ে,
মাঝিভাই বৈঠা বায় ভাটিয়ালি গেয়ে।
সারাদিন খেয়া পার শেষ হলে পরে,
তরীখানি তটে রাখি যায় মাঝি ঘরে।
কল কল বেগে নদী বয়ে চলে যায়,
সাঁঝের আঁধার নামে নদী কিনারায়।
জোছনার রাশি ঝরে অজয়ের ঘাটে,
পূবদিকে রবি ওঠে কালো রাত কাটে।
——-ঃ ঃ———–
নদী চলে এঁকে বেঁকে
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
নদী চলে এঁকে বেঁকে কল কল বেগে,
সাদা বক পাখা মেলে উড়ে রাঙামেঘে।
সকালের সোনা রবি পূবদিকে ওঠে,
নদীকূলে কাশবনে কাশ ফুল ফোটে।
নদী কিনারায় এসে ভিড়ে তরীখানি,
যাত্রীদের কলরব মাল টানাটানি।
হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি মহা কোলাহল,
মাথায় বোঝাই নিয়ে চড়ে যাত্রীদল।
নদীচরে গান ধরে একতারা হাতে,
বাউলের ঝুলি ভরে টাকা-পয়সাতে।
কলসী কাঁখে বধূরা আসে নদীঘাটে,
নদীধারে মাঠে চাষী তরমুজ কাটে।
সকালের সোনা রোদ ঝরে নদীচরে,
শালিকের ঝাঁক নদীতটে খেলা করে।
——-ঃ ঃ———–
অজয়ের ঘাটে
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অজয় নদীর ঘাটে পড়ে আসে বেলা,
নদীতটে আছি বসে আমি যে একেলা।
শেষ খেয়া বেয়ে মাঝি চলে গেছে ঘরে,
তীরে বাঁধা তরীখানি অজয়ের চরে।
সোনালী কিরণ ঝরে অজয়ের জলে,
পশ্চিম দিগন্তে রবি যায় অস্তাচলে।
সাঁঝের আঁধার নামে নদী কিনারায়,
ধীরে ধীরে তারা ফোটে আকাশের গায়।
জ্বলে দীপ, শাঁখ বাজে আসে সুর ভেসে,
শাল পিয়ালের বনে চাঁদ ওঠে হেসে।
জোছনায় নদীজল করে ঝলমল,
কল কল বেগে নদী বহে অবিরল।
দূরেতে শ্মশানঘাটে জ্বলন্ত চিতায়,
শ্মশানে চিতায় দেহ পুড়ে হয় ছাই।
নির্জন শ্মশানে হেথা কেহ কোথা নাই,
থেকে থেকে শেয়ালের কান্না শোনা যায়।
রজনী প্রভাত হয়, অমানিশা কাটে,
রবি ওঠে বায়ু বয়, অজয়ের ঘাটে।
——-ঃ ঃ———–
নদীর কিনারায় সরু বালির চর
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
কিনারায় সরু বালির চর নদীর ঘাটের কাছে নৌকা বাঁধা আছে,
নদীর পাড়ে প্রকাণ্ড বটগাছ, গাছের ডালে পাখিরা সব নাচে।
নদীর তটে গামছা পরা ছেলে, সরষের তেল মাখে সারা গায়,
নদীর হাঁটুজলে গোরুর গাড়ি আর গোরু মোষ পার হয়ে যায়।
নদীর কিনারায় সরু বালির চরে বসে মাছ খায় ধবল বলাকা,
শংখচিল উড়ে যায় দূর আকাশের গায় মেলে তার দুটি পাখা।
নদীর কাছে শ্মশান ঘাটে রোজ জ্বলে ওঠে মৃত মানুষের দেহ,
চাঁদনীরাতে আকাশে ওঠে চাঁদ, নদীঘাটে থাকে না আর কেহ।
নদীর কিনারায় সরু বালির চর, জোছনারাতেও গা ছম্ ছম্ করে,
মৌনরাতি কেটে যায় অবসাদে, ভোরের আলোয় চিত্ত ওঠে ভরে।
নদীর দুই পারে গাছে গাছে শুনি আমি রোজ প্রভাত পাখির গান,
নদী আপন বেগে বয়ে চলে দিবস-রাতি শোন ঐ নদীর কলতান।
===============================
আমার পাতায় আমার পরম শ্রদ্ধেয় কবিগণের সহৃদয় মন্তব্যে
যাঁদের কাছে অনুপ্রেরণা পেয়েছি তাঁদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।
===============================
বাংলা কবিতা আসরের স্বনামধন্য কবি পরম শ্রদ্ধেয় অজিত কুমার কর মহাশয়ের মন্তব্য
মনের কোণে উঠল ভেসে আমার গাঁয়ের ছবি
কৃতজ্ঞতা জানাই তোমায় অজয় পারের কবি।
বাংলা কবিতা আসরের
শ্রদ্ধেয় কবি সঞ্জয় কর্মকার মহাশয়ের মন্তব্যটি এই রকম।
…………..অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতির লেখা। এর পরের ঘটনাগুলি আমি লিখে যাই।
তারপর চাঁদ ওঠে গগনেতে তারা ফোটে,
একতারা বাউলেতে, গান করে
ঘুরে পথে।
রসুইতে পাঁক ঘরে বঁধু তারা হাতা ধরে,
কালু মিঁয়া থলে নিয়ে, মাছ নিয়ে
ঘোরে ফেরে।
নদীয়ালী মাছ তার টাটকা ও জ্যান্ত,
কম দামে ফেরি করে
ঘুরে ঘুরে প্রান্ত।
প্রান্তরে প্রান্তরে কুপি শিখা ওঠে জ্বেলে,
ঘন রবে কচি কাঁচা, ফেরে ঘরে
কলোরোলে।
তারি খেয়ে ভোলা আলি খুব করে ঢোলাঢুলি,
মধুরেন শ্রাব্য সে-রঙ্গেতে
কথা কলি।
রাত বাড়ে নিশাচরে কুহক সে ডাকে ঝি ঝি,
সুর তোলে সপ্তমে, আর মোরে ভাজে
ভাজি।
গিলা ভুটি দিয়ে মাল-খায় যদু মধু রায়,
হাতাহাতি মারামারি, আর রাতি
বয়ে যায়।
ধীরে ধীরে নির-ঝুম শান্ত সে হয়ে যায়,
শীতলতা প্রীতিলতা শিথিলতা
প্রাণে বয়।
বাংলা কবিতা আসরের সবার পরিচিতা কবি রীণা বিশ্বাস মহাশয়ার মন্তব্য
অজয় নদীর তীরে
আমার ফেলে আসা বাসাটিরে
কবিতায় দেখি বারে বারে……
বাংলা কবিতার আসরের আমার সহৃদয় কবি মহঃ সানারুল মোমিন (বিনায়ক কবি) মহাশয়ের আবেগময় মন্তব্য
এল নতুন প্রভাত, পাখিরা দিল সাথ,
যাবো মোর অজয়ের তীরে।
মনে আনন্দ, নিয়ে সুর ছন্দ,
মিশে যাবো জনতার ভিড়ে।
এল হাটুরের দল, করে আনন্দ কোলাহল,
বাসায় তীরে হাটের মেলা।
অজয় চিরসাথী, সাথী আর কিছু ছায়াবীথি,
মাঝিরা আনন্দে করে খেলা।
বাংলা কবিতা আসরের অন্যতম প্রিয়কবি মূলচাঁদ মাহাত মহাশয়ের মন্তব্য
“অজয় নদীর বালুচরে
তপন নামে পাটে,
গোধূলি বেলার রশ্মিমালা
চিকচিক করে তটে।
সুখ দুখের কথা বলে
অজয় নদীর ধারা,
হাসি আনন্দ ব্যথা বেদনা
জীবন স্রোতের পারা।…”
আমার প্রাণপ্রিয় শ্রদ্ধেয় কবি শ ম শহীদ মহাশয়ের সহৃদয় মন্তব্য
দিনের পরে রাত, রাতের পরে দিন
এভাবেই ছুটে চলা প্রান্তের দিকে
পেছনে অযুত স্মৃতি, সর্ম্পকের ঋণ!
ক্রমশঃ সবই যেন হয়ে আসে ফিকে!
আমার প্রাণসখা শ্রদ্ধেয় কবি সুবীর পাণ্ডে মহাশয়ের অনুপ্রেরণাদায়ক সুমন্তব্য
কাব্য পাঠ করে অজয়ের তীরে বসার ইচ্ছে হচ্ছে। অবশ্য যাইনি কোনোদিন। যদি কখনও সেরকম সুযোগ আসে তবে অবশ্যই অজয়ের তীরে বসে প্রকৃতির মনোহর সুরা আমি গ্লাসে গ্লাসে পান করব। শেয়ালের ডাক আর অজয়ের কলকল ধ্বনির সাথে নিজেকে উজাড় করে দেবো প্রকৃতির হাতে। ধন্যবাদ কবিবর। অজয়ের তীরে না বসেও অজয়ের স্বাদ পেলাম। শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন।
সর্বশেষে আমার মন্তব্য
আগামী সংখ্যায় আরও মন্তব্য প্রকাশ করবো। কথা দিলাম।
সবার মন্তব্য প্রকাশ করতে না পারার জন্য মার্জনা চাইছি।
সকলকে আন্তরিক প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানাই।
সাথে থাকুন, পাশে থাকুন।
জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!