ঐতিহ্যে ফসলি সন
লেখাঃ অনিক শিকদার
ঝিঙাফুলের মতো শুভ্র কুঁকড়ানো গাল ভর্তি দাড়ি
তার ভাঁজে ভাঁজে চৈত্র-রাজার উত্তাপ দহন জারী।
মুক্তোদানা ঘামের বিন্দু দাড়ির প্রন্তদেশে
ক্লান্ত খুব, একটু জিরাতে আম্রকানন পাশে।
শীতল বায়ু পরাণ হিম করে মেঘেরঘটা আনে
চৈত্ররাণীর দাপট ভেঙে কালবৈশাখী হানে।
পুকুরে হিজল-বরুণ স্নিগ্ধ ধারার তালে ভাসে
দাদুর কৃষাণ-মন খাজনার হিসেব কষে-
কাল হবে হালখাতা হিসেব যে মিলে না,
এবার বুঝি রাজতন্ত্রে রেহাই পাওয়া গেল না!
ভয়ে ভয়ে দাদু মাশুল দিতে রাজ দরবারে যাবে
বোরোচিকন আর বাওলাআউশের মাঠ পেরোতে হবে।
খানিক খাজনা মৌকুফ হল হালখাতার দৌলতে
মিঠাই লয়ে বাড়ি ফিরে দাদু আপন খুশিতে।
আমাকে ডেকে বলে- কাল ঈশা খাঁর বউমেলা
বউ একখান কিনে দিব কাল সকালের বেলা।
ভোর বেলা উঠি নতুন জামা- সাজ পরিপাটি
একতারা হাতে বাউলের গান কাঁপিয়েছে মাটি।
সকালে মিলে পান্তা-ইলিশ আরো মিলে পিঠাপুলি
সকলে মিলে একসাথে রই বাঁধা ভেদাভেদ ভুলি।
দলে দলে চল মেলায় যাব আজ বৈশাখী মেলা
পুতুলনাচ আর নৌকা বাইচ দেখব সারা বেলা।
নাগর দোলা, বলি খেলা, আরো হবে লাঠিখেলা
শেষ বিকেলে দেখা মিলবে আলীর কুস্তি খেলা।
দু’হাত ভরে বান্নি করে রাতে ফিরলাম বাড়ি
উঠোন কোণে আসরজমা, পুঁথিপাঠ হবে ভারী।
মাঝ রাতে আসে কালবৈশাখী – ভয়ে মত্ত সবাই
যে যার মত পালিয়ে বেড়াই কাঁথার নিচে লুকাই।
দাদু তুমি দিয়েছিলে মোরে সোনালি শৈশবস্মৃতি
প্রজন্মান্তরে ঐতিহ্যের কেন নির্মম বিকৃতি?
তুমি নাই – আমি আছি দাঁড়িয়ে, অসার-একাকী রিক্ত
আমার নাতি চেয়ে মোর পানে সেও অশ্রুসিক্ত।
১লা বৈশাখ ১৪২৫
নারায়ণগঞ্জ