অজয় নদীর তীরে
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
প্রভাত রবির কিরণ ছড়ায়
অজয় নদীর তীরে,
হাটুরেরা সবে আসে দলেদলে
কিনারায় তরী ভিড়ে।
ছাড়িল তরণী কেহ ডাকে শুনি
ডেকে বলে মাঝিভাই,
একটু দাঁড়াও চড়ি তব নাও
ওপারেতে যেতে চাই।
নিম কাঠি দিয়ে মুখ ধোয় কেহ
দেখি স্নান করে কেহ,
কেহ স্নান করি শুচি বস্ত্র পরি
চলিছে আপন গেহ।
নদীর এপারে পথের দুধারে
শাল পিয়ালের বন,
তরু শাখেশাখে বিহগেরা ডাকে
ভরে ওঠে মোর মন।
শালিকের দল হেরি অবিরল
উড়ে আসে বালুচরে,
হেথা হেরি দুটি কপোত কপোতী
একসাথে খেলা করে।
মাটির কলসী কাঁখে লয়ে সবে
বধূরা নাইতে আসে,
দুটি পাখা মিলে শঙ্খচিল ওড়ে
দূরে সুনীল আকাশে।
স্নান হলে সারা গাঁয়ের বধূরা
চলে নিজ নিজ ঘরে,
ছোট ছোট ছেলে মার সাথে চলে
মায়ের হাতটি ধরে।
নদী ঘাটে এক ধবল বলাকা
বসে আছে বালুচরে,
ঠোঁট দিয়ে তুলি ছোট মাছগুলি
চায় খেতে প্রাণভরে।
দূরে নদীপাড়ে কাশ-ঝোঁপঝাড়ে
শিস দেয় বনটিয়া,
কোকিলের ডাক শুনি থেকে থেকে
পুলকিত হয় হিয়া।
ধীরেধীরে ঘাটে পড়ে আসে বেলা
সূর্য হয়ে ওঠে লাল,
শ্মশানের ঘাটে জ্বলে উঠে চিতা
আসে নেমে সন্ধ্যাকাল।
দিবসের শেষে শেষ অস্তরাগে
হেরি সূর্য বসে পাটে,
দিবা অবসানে অন্ধকার নামে
অজয়ের ঘাটে ঘাটে।