স্মৃতির আঙিনা
লেখাঃ অনিক শিকদার
দাদা ভাইয়ের পায়ে বাতের বড্ড ব্যথা;
কেরোসিন-প্রদীপে উত্তপ্ত রসুন-সরিষা;
কত যত্নে মালিশ করতাম!
দাদির ঘন চুলে উকুন খুঁজে বিকেল কাটাতাম,
সুগন্ধি তেল মাখিয়ে দিতাম আর সাদা চুল তুলে দিতাম,
চিরুনির ফাঁদে কোমল চুলের লুকোচুরি খেলা খেলতাম।
দাদা ভাইয়ের সাথে রোজার রাতে দুধভাত-সেহরি,
দাদির হাতে শীতের ভোরে উষ্ণ-মিষ্ট ভাপাপিঠা,
আরো যে কত কি? অযুত-অর্ধেক ভুলেই গেছি!
চৈতি চাঁদেরহাট বসত আমাদের উঠোন মাঝে,
মুগ্ধ-বিভোর হয়ে মদিরাক্ষী মেলে গল্প শুনতাম
কখনো ভয়ে কেঁপে উঠতাম!
কখনো ঈসা (আঃ) কিংবা মুসা (আঃ)
কখনো আবার বেহুলা-কমলা কিংবা চাঁদ সওদাগর।
কখনো কষ্টেসৃষ্টে প্রেমে-আদরে উসমান-জোৎস্না মহাকাব্য।
আজও আছে আমাদের সেই স্মৃতিময় উঠোন,
কার্তিকের মাছ সব জলেই আছে,
শুধু উঠোনের রোদে শুঁটকি হয় না আর।
ধানের জমিতে আজ নীলকরের শূন্য ছাপ!
আজও মসজিদে আযান হয় কিন্তু দাদাভাই ডাকে না-
মাস্টার কই? আয় নামাজে যাই।
আজ মরিচের ক্ষেত রুক্ষ থেকে যায়, পানির অভাব
কেউ চুকাতে আসবেনা। আমিও একেলা ভাসি
স্বপ্নে দাদাভাইয়ের সাথে কাঁদি-হাসি।
আর দাদি? সে তো এখন বড্ড উন্মাদ-বুড়ি
আমাকে বলে, দাদা তোমাকেই ভালবাসি।
১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪২৪
নারায়ণগঞ্জ