নীলকলঙ্ক

নীলকলঙ্ক
লেখাঃ অনিক শিকদার

শান্তিছবি বঙ্গদেশ আমার
আমি উদ্যমী চাষাভুষা কোনোএক পরগণার।
শান্তির তরে বাঁচতে চাই যা আছে নিয়ে আমার।
যত শাসন-শোষণ মেনে নিয়ে বর্গাপ্রথাই হার,
অন্তরে শান্তিকুঠির মরচেপড়া আছে
মুখে হাসির মহাসিন্ধু উপচে পড়ে নাচে।
কে এনেছে সুখের ঘরে নীলাভ আগুন?
ঝরে গেল পাতা সব মুছে গেল ফাগুন।
নায়েবি অত্যাচার শুরু হয়ে যায়!
চাষাদের স্বপ্ন বধ হয় মাঠেঘাটে বিলে,
বৃটিশের পুঁজিতন্ত্র বেড়ে যায় নীলে।
কেউ কি নেই থামাবার, চাষাভুষা কি মানুষ না?
আমার মাটিতে আমি পুড়ে অঙ্গার!
আমার রক্ত উনুনে নেড়ে গাঢ়রূপে হই নীল,
সোয়াকোটি চাষা জ্বলে অবিরত কুঠিপ্রথা তলে,
সাহেবি পেয়াদা মারধর করে অধিকার লুটে যায়
বাড়িঘর সব পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
বন্দীনিবাস পেয়েছিলাম কুঠির ঘরে
মেনে মনে ভেবেছিলাম হাজী মোল্লা ঠিক বলে,
নীল চাষ থেকে ভিক্ষাই উত্তম ছিল।
মুৎসুদ্দি শহুরেদের চিন্তা অতি ভিন্ন বৈকি নগ্ন
বৃটিশের নোনে নাক চুবিয়ে গোলাম-জঘন্য!
পঞ্চাশে বিকে দেওয়ান আর চৌদ্দে আমিন
এই ব্যবসায় সবই সচল শুধু চাষা-পণ্য মলিন।
মলিন পণ্য খরিদদার দীনবন্ধু মিত্র,
দর্পণতল তুলে ধরে সব চক্রীয় চরিত্র।
কুচক্রের চক্রান্তে পণ্য হলেন অনেক জন
মাইকেল মধুসূদন থেকে রেভারেন্ড লং।
বীর বঙ্গীয় চাষাভুষা বিদ্রোহানল ছাড়ে
নীল পুড়ে কালো হয়ে আকাশ মেঘে মিশে।
আকাশীরং হালকা হল নীলকলঙ্ক বিষে
চাষার হাত বড়ই শক্ত মরে না হয় মারে।

৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৪
নারায়ণগঞ্জ

0.00 avg. rating (0% score) - 0 votes