পাঠকের আনুরোধে (শুদ্ধ) বাংলা অনুবাদ (নিচের আমার মাতৃভাষা থেকে):
[চাঁদপুর আর নোয়াখালির ভাষা এক রকম নয়। কিছুটা ভিন্নতা আছে। উদাহরণস্বরূপ: যেমন – আমদের (শুদ্ব) > আংগো (নোয়াখালি)> আমরার (চাঁদপুর)]
-:কালো পানি:-
আমি এসেছি
আমি জানি, এই ভিটে মাটিতে কেউ আর থাকে না
এরপরও আমি এসেছি
দাড়িয়ে আছি, তোমার বাড়ির সদর দরজায়
যে খান থেকে দেখা যায়
আমার পছন্দের জবা গাছ আর
তোমাদের ঘরের দুই কপাটের দরজা।
সদর দরজা থেকে তোমাদের ঘর
সরু পথের দু’দিকেই
তোমার করা ফুলের বাগান
কত দিন ফুল গুলোকে হাতে ছুয়ে দেখেছি
তুমি দুর থেকে দেখে দেখে হাসতে!
এতক্ষনে তোমার বাবা
আমার সামনে এসে দাড়ানোর কথা;
আমি আস’লেই উনি কি ভাবে যেন টের পেয়ে যান!
আমি যেন, ডাকাতি করতে এসেছি –
চোরের চেয়েও বেশি;
আড় চোখে তাকিয়ে চেহারা দেখেন আর ভাবেন!
জানি, উনিও নাই আর এখানে!
তারপরও, মনের ভয় তাড়ানো যায় না
মনে হয়, চোখ তুললেই উনাকে দেখবো।
আমি তোমার বাবা’র পিছনে তাকিয়ে থাকি
যদি তোমার মা আসে
যদি আসে, জানতে চাইবো
খালা – বাতাসী কোথায়?
বসত ঘরের পেছনে – পাক ঘরে
কিরে তোদের স্কুল এতো দিন বন্ধ কেন?
আমি জানি, খালা কি বলবেন।
আহারে, আজ সে খালাও নেই!
তুমি আমি যে খান থেকে প্রসাদ চুরি করতাম
সেই পুজা ঘরের যায়গায়
কারা যেন গোয়াল ঘর উঠিয়েছে!
ঘরের সামনের তুলসি গাছটাও নাই আর।
সদর দরজা থেকে পিছন ফিরলেই
নদীর পানি দেখা যায়
আমি ফিরে দেখেছি, এখনো দেখা যায় নদী
ছোট হয়ে গেছে নদী, খালের মত
পানিও দেখা যায় সদর দরজা থেকে!
আগের মত বাদামী পানি নাই আর
কা-লো, পুরা কালো হয়ে গেছে সব পানি!
বিশ্বাস কর না?
আচ্ছা, তোমাদের দেশের নদী’র পানি’র দিকে
একটু খেয়াল করে দেখো
নদীর সাদা/বাদামী পানির সাথে কিছু কিছু কালো পানিও আছে
বিশ্বাস করো
সবই আমাদের ডাকাতীয়ার কালো পানি
এখান থেকেই গেছে!
ক্যানবেরা
অনুবাদ
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
=============
মাতৃভাষায় লেখা কবিতা
(চাঁদপুরে’র যে যায়গায় আমার জন্ম সে খানটা একদিকে নোয়াখালি, আরেকদিকে কুমিল্লা)
-:কালা হানি:-
আঁই আইচি
আঁই জানি, এই ভিডায় আর কেউ থায় নাহ
তারহরও আঁই আইচি
খাড়াই রইচি, তোয়ার বাড়ির ঘাডার আগো
যেয়ান থাই দেয়া যায়
আঁর হছন্দের জবা গাছ আর
তোয়ার ঘরের দুই কপাটি দুয়ার।
ঘাডার আগোথতাই তোংগো ঘর
চিয়ন হতের দু’দিকেই
তোয়ার লাগাইন্না হুলের বাগান
কত দিন বেগগুল হুলে আত দি দি চাইচি
তুই দুরেততুন দেই দেই হাইসতা!
এতক্ষনে তোয়ার বাপ
আঁর সামনে আঁই খাড়াই থানের কথা;
আঁই আইলেই হেতে ক্যন্ণে জানি টের হাই যায়!
আঁই জানি, ডাকাতী কইত্মাম আইছি –
চোরের তনও বেশি;
টেরা টেরা চোকে, আঁর হুরা চেয়ারা ছায় আর মাপে!
জানি, হেতনেও নাই আর এয়ানো!
তারহরও, মনের বয় দড়াইতাম হারি না
মনে অয় চোখ তুইল্লেই হেতনেরে দেককুম।
আঁই তোয়ার বাপে’র হিচনে চাই থাই
যদি তোয়ার মা আইয়ে
যদি আইয়ে, জিগ্গাইয়ুম
খালা – বাতাসী কোনাই?
বাইন্দুয়ারে – রসাইঘরে
কিরে তোগো ইসকুল এত দিন বন্দ কিল্লাই?
আঁই জানি, খালা কি কইব।
আহারে, আইজ হেই খালাও নাই!
তুই আঁই জেয়ানতাই পসাদ চুরি কইত্মাম
হেই হুজা’র ঘরের যায়গায়
কারা যানি গরুর গর উডাইচে!
গরের সামনের তুলসি গাচটাও নাই আর।
ঘাডার আগেততাই হিচন হিরলেই
নদির হানি দেয়া যায়
আঁই হিরি দেকচি ওনও দেয়া যায় নদি
চোড অই গেচে নদি, খালের মত;
হানিও দেয়া যায় ঘাডার আগেততাই!
আগের মত বাদামী হানি নাই আর
কা-লা, হুরা কালা অইগেচে সব হানি!
বিশ্বাস কর নাহ?
আইচা, তোমাগো দেশের নদি’র হানি’র দিগে
একটু নজর দি চাইয়ো
নদীর সাদা/বাদামি হানির লগে কিচু কিচু কালা হানিও আচে
বিশ্বাস করো
সবই আমগো ডাকাতিয়ার কালা হানি
ইয়ানতাই ই গেচে!
ক্যানবেরা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭