এই তো সেদিন তাকে প্রথম দেখেছিলাম
চিনতে পারিনি, প্রয়োজন মনে করি নি।
দেখেছিলাম বাঁশ বাগানের পথের ধারে,
পাগলের মত বাঁশ পাতা এক এক করে ছিঁড়ছিল
কোন এক গাঁয়ের পুকুর পাড়ে।
হয়তো আবার কোন এক বাসস্ট্যান্ডে
দিনে দুপুরে নয়তো বা নবান্নের আনাচে কানাচে।
কিন্তু সেদিন সে দেখা দিল হাওড়া স্টেশনে,
অন্যরুপে, অন্যবেশে, অনন্য ভূমিকায়।
কাঁটা পাউরুটি চিবাচ্ছিল দাঁত বের করে
পরণে ছিল ছেঁড়া কাপড় , পায়ে এক পাটি চটি,
আবরণে ময়লা, জীর্ণ জামা, গেঞ্জি,
লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা এক অচেনা অতিথি ।
পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম–
পারি নি- মনে হোল তারে আমি চিনি ।
অবাক নয়নে চেয়ে থাকতে বসে পড়লাম
স্বল্পদূরে পাতা এক ভাঙ্গা কাঠের সিঁড়িতে।
বিষ্ফারিত নয়নে চেয়ে থাকি তার পানে-
কি করতে চায় সে? কিবা তার অভিলাষ!
তার দৃষ্টি সবার পানে অন্ধের ভানে,
পাকা খেলোয়াড় সে ছাড়ে যেন তুরুপের তাস।
হঠাৎ তার পাশে দুই আগন্তুকের আবির্ভাবে
ছানাবড়া তার নয়নযুগল পলক ফেলা বন্ধ করে,
অন্ধের ভানে আড়ি পাতে তাদের আলাপচারিতায়।
সন্দেহাতীত ভাবে খেলা করে তার ডাগর চোখদুটো
পৌঁছাতে চায় সে তার অভীষ্ট গন্তব্যস্থলে।
ঘড়িতে মিনিটের কাঁটা পুরো পাক খায় একবার,
কথা যেন থামে না আর দুই আগন্তুকের –
দেনা-পাওনার হিসাব চুকোতে বড়ই ব্যস্ত তারা,
সাক্ষীী থাকে সারাক্ষণ নাম না জানা অচেনা অতিথি ।
হঠাৎ থমকে যায় তারা ভিক্ষুকের গর্জনে
যখন দৃঢ়কন্ঠে নির্দেশ দ্যায় পাশে থাকা সঙ্গীদের,
হাতে হাতকড়ি পরায়ে নিয়ে যাবার আদেশে
অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকা পাশে বসা যাত্রীদের।
সন্ধানী মন হার মানে না কভু কোন কিছুতেই
দেশ গড়ার স্বপ্ন যে উঁকি মারে গোপনে,
ছেঁটে ফেলা যত সমাজের বেড়ে ওঠা আগাছাদের
দেশের তরে নিজেরে সঁপে আপনমনে ।
———