রণক্ষেত্রে
কুমারেশ চক্রবর্তী
রণক্ষেত্রে বসে আছি একা—
যারা সঙ্গে এসেছিল তারা যুদ্ধ করে নি—
যারা ছিল শত্রুপক্ষের— তারাও…!
অথচ, দু-পক্ষই দুটো আলাদা ঘোষণায় বলে নিল জয় !
কার জয় ? কিসের জয় ? প্রশ্ন তুলতেই—
স্পিকারের দেওয়া পার্টিতে সরকার ও বিরোধী মিলেমিশে
কোনো গোপন বোঝাপড়ায়
খারিজ করে দিল আমার নাগরিকত্ব !
এবং এ বিষয়ে কোনো টিআরপি হবে না জেনেই হয়তবা
প্রায় সবক’টা দেশীয় মিডিয়া তাদের পক্ষ-প্রতিপক্ষদের নিয়ে—
ঢুকে গেল অন্য আলোচনায়…!
হাস্যকর ধর্মযুদ্ধ ! জয়-পরাজয় নাকি নির্ধারিতই ছিল !
সে-কারণেই ঋষি ব্যাসদেব, পিতামহ ভীষ্ম ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের
পক্ষপাতিতা নিয়ে আজও কোনো তর্ক ওঠে না…
একদল পাশার চালে তোমাকে জিতে তুলে নারীত্ব ধুলোয় মেশালো,
অন্যদলও ধর্ম ধর্ম করে হত্যা করে গেল ভাই,
বন্ধু, আত্মীয়, পরিজন…
সংসদের ভেতরে-বাইরে তারা সবাই এককাট্টা ! একটাই দল !
প্রয়োজনমতো ভাগ হয় ! ভাগ করে ! বিভ্রান্ত করে !
আর আমাকে ঘিরে ক্রমাগত উপেক্ষা—
জানি না আমি কোন পক্ষ !
তবু দু-হাতে আগলে রেখেছি এই পবিত্র রণভূমি—
কাউকে দিই নি এই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ, জেনে গেছি আচার্য দ্রোণের কপটতা ৷
ওঠো, উঠে এসো পাতাল ফুঁড়ে—
দেখ— গাছে গাছে আগুনের ফুল, নিরীহ পাখিদেরও—
ডানার ভেতরে দেখ— জেগে ওঠা আগুনের বিস্ফার !
বিশ্বাস করো কেউ আত্মহত্যা করবে না—
যুদ্ধ করবে…
বিনয়গ্রাম
কুমারেশ চক্রবর্তী
পাঁচশো সাইত্রিশ আপ ঠাকুরনগর স্পেশাল—
উৎসব ও ঝঞ্ঝা-বিঘ্নিত—
এ গাড়ি যাচ্ছে বিনয়গ্রাম !
আঁকাবাঁকা রেল, দু’দিকেই মেটেঘর—
গা ঘেঁষাঘেঁষি আলো… অন্ধকার…
ইতিউতি কথা বলে ক্ষুর, ভোজালি, পেটো !
চারদিকে ধোঁয়া-ধুলো, চারপাশে ভস্ম—
ভস্মে জড়ানো বাসর ! কী মধুর খিস্তি ! সারারাত প্রেম !
সারারাত ফ্রি— উৎসব ! ফ্রি— মধুভাণ্ড !
মাঝেমধ্যে কেঁদেও উঠছে নতুন জন্মানো কোনো শিশু !
গাড়ি চলছে হেলেদুলে— ঝঞ্ঝা, ঝঞ্ঝা-বিঘ্নিত…
কিছুক্ষণ পরপরই বৃষ্টিনাচ ! মেঘে মেঘে ডায়ালটোন !
বহুদিন পরে যেন বর্ষা মানে জল, কাজরি, জন্মমাস,
ঘাটে নতুন নৌকো—
নৌকোয় স্বপ্নে পাওয়া কোনো রাতের মধুকরী…
আবার এ-গাড়িতেই ছুরি চালাচালি, ছিনতাই—
সঙ্গে আকাশ-তাড়িত কত নষ্ট তারাদের গুছি !
হকারেরও ডালা ভর্তি ছোলা, বাদাম, ডালমুট…
আর মুখে মদের গন্ধে বিরহ জাগানো—
“… কবিতা সমাপ্ত হতে দেবে নাকি ?…”
এ গাড়িতেই গান ফেরি করে অন্ধ কানাই—
স্টেশন আসছে, যাচ্ছে…
আমরাও উঠছি, নামছি—
বুকের ভেতরে কবি বিনয় মজুমদার !