একুশে ২০১৫ বিশেষ সংখ্যা

mita-mehedi-625

স্বাধীনতা: তারিকুজ্জামান বাঁধন

badhan

মৃত্যুরা আজ রাস্তায় বেঁধেছে আশ্রয়, বন্দুকের নলে, গুলিতে
ককটেল, হ্যান্ডগ্রেনেড কিংবা পেট্রোল বোমে; স্লোগানের তালে-
অসহ্য সময়।
পথে নেমেছে আধারের মিছিল, সামনে তার পথশিশু
গ্রেনেডে ওড়া দেহ- সঙ্গী হারানোর কষ্ট নয়; মিছিলের ফেষ্টুন।
রাস্তায় বাসে ট্রাকে ধর্ষিতা নারী নয়, আমার স্বাধীন দেশ
আমারা ষোল কোটি ভেতো বাঙ্গালী নিরুত্তাপ নিরুদ্দেশ।
পঞ্চাশ টাকায় মিথ্যা স্বাক্ষী, একশত টাকা মিছিল ভাড়া, দু’শ টাকায় ভোট
রাষ্ট্রপতি আজ খুনের ক্ষমা, কোটায় বন্দী মেধা
সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা আজ নিলামে। এ আমার-
আজন্ম পাপের জঠরে জন্ম নেয়া প্রিয় স্বাধীনতা।

আজ স্বাধীনতা আমার-
হরতাল, আগুন, অসহযোগ আর ঢাকা মেডিকেলের
বার্ন ইউনিটে ঘুমন্ত নগরীর নির্জনতা ভাঙা চিৎকার
অসুস্থ সময়; অবাধ্য ক্ষমতা।

আমার স্বাধীনতা আজ লাশের মিছিল, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, সংখ্যালঘু নির্যাতন,
ধর্ষিতা বড় বোনের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা,
মায়ের আঁচলে আগুন, বখাটের দখলে থাকা ছোটবোনের স্কুলের রাস্তা।
স্বাধীনতা আজ ঘুসহীন আটকে থাকা পেনশান, সাংবাদিকের ক্যামেরায় ফটোশপ
এক টিকেটে দুই ছবি অথবা মিডিয়ার ব্যানারে চাঁদাবাজির লাইসেন্স।
স্বাধীনতা আজ আমার ঢাকা ক্লাবে নির্দিধ বেহায়াপনার সুযোগ
অথবা একশত টাকায় কেনা যৌনতা।
গণজাগরণের নামে রাজনীতির সাপ লুডু নয়তো অন্ধ বোবা সুশীল সমাজ।
আমার স্বাধীনতা আজ ছায়া হাতের নিয়ন্ত্রিত অনিয়ন্ত্রন,
বইমেলা, বস্তি আর গার্মেন্টস্ ে আগুন, আর-
ষোল কোটি বাঙ্গালির ভেতো চোখে পূর্ব জনমের আগুন নেভা ভষ্ম।
স্বাধীনতা আজ আমার পাশের বাসায় আর্তচিৎকার;
সাহায্য চেয়ে আকুলি বিকুলি, তবু দরজা-জানালা ভেজিয়ে আমার ভাত ঘুম।
স্বাধীনতা আজ আমার পীর বাবার দোয়া; নির্বাচন, ভোট, নমিনেশান,
হাজার হাজার কোটি টাকার চোরাই ভিওআইপি, শুল্ক বিহিন গাড়ি আর
শেয়ার বাজারে নিশ্চুপ লুন্ঠন।
স¦াধীনতা আজ আমার শেকলের মালা, রাস্তায় বাসা বাঁধা মৃত্যু,
অসহ্য সময়, দুঃসহ দিন আর মরে না যাবার জন্য বেঁচে থাকা।
এই আমার স্বাধীনতা
আমার রক্তে কেনা স্বপ্ন।

 

গলিমুখে সুপারম্যান: – রনক জামান

ranakপথের ওপাশে যে এলোমেলো লোকটি
প্যান্টের উপর দিয়ে চাড্ডি পরেছে—
সে নিজেকে বড় সুপারম্যান ভাবে।
সকাল-বিকাল ওড়াউড়ি করে, সন্ধ্যায়
ধপ করে পড়ে! সে জানে না সে পাগল।
কেউ তাকে ‘পাগল’ ডাকলে
দ্বিগুণ উৎসাহে এ-গলি ও-গলি করে…

জীবনানন্দ ট্রামচাপা পড়ে। ডাইনোসর
বিলুপ্ত হয়। অতিকায় হস্তী লোপ পায়।
টিকটিকি টিকে থাকে শুধু।

 

প্রথম জীবন, দ্বিতীয় মৃ্তূ্র আগে: মাকসুদ আলাম

maksudআমি বাউল হতে চেয়েছিলাম
আমি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হতে চেয়েছিলাম
সাম্যের স্বপ্ন, শ্রেনীহিন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম।
পথিক হতে চেছিলাম আমি,
পথে পথে স্বপ্ন ফেরি করতে চেয়েছিলাম।

বান্দরবন কলেজে দশন এর মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম
প্রকৃতি দেখতে চেয়েছিলাম সুন্দরবনে।
আমি বাউল হতে চেয়েছিলাম
বাংলার পথে পথে।

অনেক নিমম সত্য বলতে চেয়েছিলাম
অনেক জঞ্জাল মুছে ফেলতে চেয়েছিলাম
সন্যাসি হতে চেয়েচিলাম আমি
বাংলার পথে প্রন্তরে।

চরকেওয়ার, চরমুসুরা, মুন্সীরহাটে খেয়াঘাট
থানাকউস্নিলের মোড়, বাগমামুদালী পাড়া,
অসমাপ্ত পথচলা – অসমাপ্ত দিনলীপি
অসমাপ্ত প্রেমের মত এখনও হেটেচলা।

আমি বাউল হতে চেয়েছিলাম – বাংলা ভাষার বাউল
সালাম-বরকত-জাবারের হাতধরে হাটতে চেয়েছিলাম
আসাদের রক্তাক্ত সাটটা চেয়েচিলাম আমি
আমি শেখ মুজিবের জয় বাংলা চেয়েছিলাম
আমি কবি হতে চেয়েছিলাম
বাংলা ভাষার কবি।

ক্যানবেরা
০৩/০২/২০১৫-০৬/০২/২০১৫

 

তোমাকে ভেবে জাাতুল ফরদৌস (হাপি)

happyতোমাকে ভেবে আমার হয়না আকাশ দেখা,
হয়না তারা গোনা, হয়না জোনাকি ধরা
হয়না একা থাকা।
তুমি আস কল্পনাতে ছায়াসঙ্গী হয়ে
সারাক্ষণ থাক আমার পাশে
লুকোচুরি খেল আবছা আলোয়
সময় নিয়ে যাও বয়ে।

তোমাকে ভেবে আমার হয়না বাগানে বসা
হয়না ঘাসফুল ছেড়া,
হয়না ফড়িং ধরা হয়না ঘরে আসা।
তুমি আস ছদ্মবেশে সবকিছুর মাঝে
কখনো ঘাসফুল, কখনো ফড়িং হও
মরিচিকা হয়ে কাছে আস
শুধু ধরা দাও না যে।

তোমাকে ভেবে আমার হয়না কবিতা লেখা
হয়না ছন্দের মিল,
হয়না কথা সাজানো হয়না সঞ্চিতা দেখা।
তোমার নামের প্রতি অক্ষরে কলম যায় থেমে
কালি যেন কিছুতেই ঝরেনা কবিতা থেকে যায়
অসম্পূর্ণ ব্যার্থতা আসে নেমে।

তোমাকে ভেবে আমার হয়না বৃিষ্ট ধরা
হয়না রংধনু দেখা, হয়না কাঁদা জল মাখা
হয়না বর্ষা বরণ করা।
তুমি মেঘবতী হয়ে আস
বর্ষার ছলে চারিদিক আধার করে
টাপুর টুপুর ছন্দ তুলে
ভিজিয়ে দাও অভিশপ্ত জলে।

তোমাকে ভেবে আমার হয়না
কিছুই করা হয়না দুপুরের ঘুম,
হয়না ঘুড়ি ওড়ানো হয়না উপন্যাস পড়া।
তুমি বহুরূপী হয়ে সব কিছুেত মিশে থাকো
দাও শুধু কষ্ট, কষ্ট! কষ্ট! কষ্ট!

আর তোমার স্মৃিততে ঘিরে রাখো।

 

আগুনে লোবানে একুশঃ আইভি রহমান

ivyপ্রিয় বন্ধুকে লেখা চিঠি

প্রিয় লায়লা বন্ধু আমার,
তুই কি জানিস যে আমিও ভাল নেই , একেবারেই ভাল নেই রে,
হয়ত রয়েছি যোজন যোজন দূরে শারীরিক অবয়বে
কিন্তু জানিস তুই কতটা মিশে থাকে আত্মা আমার ঐ মাটির বুকে।
কাল রাতেও স্বপ্নে আব্বা মাথায় হাত বুলিয়ে গেছেন
পরশু রাতে আম্মা কি করুণ করে দেখে গেছেন যদি জানতি তুই!
আব্বা স্বপ্নে নির্দেশ করেছেন দেশের মানুষ পোড়া
বধ্য ভুমি নিজের চোখে দেখতে-
দেখে আসতে ঝলসে যাওয়া, চামড়া কুঁচকানো থর থরে
সাজানো মনুষ্য শরীরের অসহ্য কিন্তু সয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়।
আব্বা বলেছেন ওদের পাশে দাঁড়াতে,
ক্ষত বিক্ষত দেহের পাশে স্থির থাকতে,
তুই তো জানিস আমি এসব নিতে পারিনা
মাথা ঘুরে ওঠে, পায়ের পাতায় নিঃসাড় বরফ জমে যায়
গলার কাছে কষ্টের দম বন্ধ করা নীল কুয়াশায় ঢেকে যাই।
আব্বাকে আমার বলা হয়ে ওঠেনা কোন কথাই-
আম্মার করুণ চোখ নিজের চোখের আয়নায় দেখি
আশীর্বাদের তপ্ততা ঝরে পড়েছে আমার গালে।
যেখানে ভাই বোন বন্ধু স্বজন আতংকিত নিঃশ্বাসে বাঁচে
আমি কি করে নেই সুস্থতার অক্সিজেন!
দূরে থেকেও আমি যে প্রতি মুহূর্তে ঐ খানেই আছি
মুহুর্মুহু কানের পাশে পেট্রোল বোমার আর্তনাদ বাজে এই প্রবাসেও
ঝলসে পুড়ে যে শিশুটির শরীর উড়ে যায় দূরে ছিন্ন ভিন্ন
তার প্রতি নতজানু ক্ষমায় ক্ষরিত থাকি আমিও।
আমার প্রবাসী দেশের সংসদে বুকের রক্ত দিয়ে লিখেছি
যেন ওরাও জ্বালে প্রতিবাদের মশাল ,
আমার মানচিত্র পুড়তে না দিতে আর।
তুই বাদামের খোসার কথা বলেছিস
আমার চোখের সামনে পোড়া মনুষ্য
চামড়া খোসে পড়ার বীভৎসতা।
তুই আমাকে আসতে নিষেধ করেছিস, কিন্তু বন্ধু,
আমি আসব, দেখিস খুব আলতো করে পা রাখব
আমার রক্তাক্ত মানচিত্রের বুকে
আমি দেখে নিতে আসব এক মুহূর্তের জন্য হলেও, যে- আর,
কতটা চায় আর ঐ হায়েনার হাত
কতটা পেলে যাবে জানোয়ার তফাৎ।
এই ভাষার মাসে আমাদের অহংকারের
পতাকায় যারা জ্বালে অনল
তাদের মুখে থু থু ছিটাতে আমি আসব।
একুশের বেদিতে নৈবদ্য দিয়ে এসেছে যে হাত
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আজ অবধি
কাছে বা দূরে যেখানেই থেকেছে সে
তাকে তুই আসতে মানা করিস না বন্ধু আমার
যদি সেই হাত উড়ে যায় পুড়ে যায়
সন্ত্রাসের আগুনে যাক, তবুও
আমি আসব
আমার একুশের কাছে আমাকে
যে আসতেই হবে,
আসতে আমাকে হবেই, বন্ধু রে,
আমি আসছি………
আইভি রহমান। ক্যানবেরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ইং।

 

আমার একুশঃ আইভি রহমান

আজ সারাদিন কেটেছে তুমুল
উত্তাল উন্মাদ বৃষ্টিতে
একাকার হয়ে ভিজেছে ভেতর বাহির
এবং তারপরেও
বেশ খানিকটা দূর।
স্মৃতির দমকা ঝড়ো হাওয়ায় ভেসে গেছে
সাদা কালো শাড়ির ছিপছিপে মেয়েটা-সেই বেদীতে,
হাতে এক গোছা সাদা শুভ্র রজনীগন্ধা
পিঠের উপর খোলা চুলের জোয়ার নির্ভয়
উদ্ধত উন্নত কপালে টকটকে লাল টিপ
চিন্ময় গর্বে জ্বলে আছে
চোখে মুখে এক আশ্চর্য হিরন্ময় দ্যুতি
নগ্ন পা নির্মল দৃপ্ত দৃঢ়তায়
ধীরে ধীরে সমবেত সবার সাথে এক হয়ে
এগিয়ে যাওয়া- মিনার তো একটাই।
বুকের ভেতরে,খুব গোপনে
সব তেমনই আছে নিবিড় যত্নে সাজানো
শুধু শরীরটা পড়ে আছে এই দূর দুরান্তের
ধুসর সন্ধ্যায় একা নিরালায়।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ক্যানবেরা।

 

দেশ মাতৃকার: মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম

shahidএকুশ মানে হার নামানা
আমরা বঙ্গ সেনা,
একুশ মানে টালবাহানা
মানিনি মানবোনা।

একুশ মানে মায়ের ভাষা
আমার অধিকার,
একুশ মানে দালাল যত
সতর্ক – হুশিয়ার।

একুশ মানে চরণ ধুলি
দেশ মাতৃকার,
একুশ মানে মা’র চরণে
ভক্তি শতবার।

একুশ মানে বীরের জাতি
মোরা বঙ্গবীর,
একুশ মানে অপার উন্নত
আমাদের শির।

 

সেই ভাষাটি কোথায়: সাহাদাত মানিক

manikআমার এ শব্দগুলো হয়ত গতিপথ বুঝে নেবে

ভালবাসায়, যেমন জন্ম অন্ধ তাঁর আলোকিত
অন্ধকারে ঠিকই পথ খুজে নেয়।

তুমি কেন আরও একটু
অপেক্ষায় থাকলে না হেলান পাল?

যে তুমিই আমাকে দিলে
ভাষা, স্বাধীনতা,
মানবতা, মানুষের সন্মান।

আমাকে অভিসম্পাত করো না বন্ধু
তোমাকে বাঁচাতে পারিনি,
না গ্রীষ্মে না বর্ষায়
ধার্মিক রুপি সেই হায়না থেকে।

তুমি বেচেছ মরে
আমি মরেছি বেচে।

২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

0.00 avg. rating (0% score) - 0 votes

One thought on “একুশে ২০১৫ বিশেষ সংখ্যা

Comments are closed.